নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর ভোটার ও সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড ও ২নং ওয়ার্ডের ধানের শীষের ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের এই হুমকি দেয়া হচ্ছে। সেখানে নৌকায় ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার নিষেধ, বিএনপি প্রার্থীর সম্ভাব্য এজেন্টদের এজেন্ট না থাকতে এবং ভোটের প্রচারণা না করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। স্বয়ং আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান নিজেও হুমকি দিয়েছেন।

শনিবার (১৪ জুলাই) বিএনপি মনোনিত প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী অঙ্গীকার ঘোষণা সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা এই অভিযোগ করেন।

সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল জানান, ১নং ওয়ার্ড ও ২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিচ্ছে। দলীয় নির্বাচন হলেও বিএনপি ভোটারদের নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ধানের শীষের প্রচারণা চালাতে বাধা প্রদান করা হচ্ছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে এবং সম্ভাব্য এজেন্টের এজেন্ট না থাকতে ভয় দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মিত এই ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমনকি ১নং ওয়ার্ডে গিয়ে নৌকার প্রার্থী মুজিবুর রহমান নিজেই যারা নৌকায় ভোট দেবে না তাদেরকে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন।’

এসব প্রসঙ্গে লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘কক্সবাজারের রাজনীতিতে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য এবং সহাবস্থানের একটা ঐহিত্য আছে। আমরা সারাজীবন এই অবস্থানকে লালন করে রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু এভাবে যদি বিএনপি ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের হুমকি প্রদর্শন করা হয় তাহলে সেই ঐতিহ্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মারাত্মক ক্ষতি হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র বর্তমানে কক্সবাজারে হাজার হাজার বিদেশী লোকজন অবস্থান করছেন। একইভাবে সারা বিশ্বজুড়ে কক্সবাজার এক নামে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কক্সবাজারের সুন্দর পরিবেশ বিনষ্ট হলে কক্সবাজারের উপর বৈশ্বিকভাবে নীতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই আপনারা ক্ষমতার অপব্যহার করে ভোটে প্রভাব বিস্তার করবেন না।’

ইভিএম কেন্দ্র প্রসঙ্গে লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘তিন কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ষড়যন্ত্রের আভাস রয়েছে। কেননা এক ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করার কোনো ধরণের যৌক্তিকতা নেই। মূলত ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট কম কাস্ট হয়। তাই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রফিকুল ইসলামের নিজ এলাকা ১১ ওয়ার্ডের সাবকেন্দ্রসহ তিনটি কেন্দ্রেই ইভিএম- এ ভোট নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা কখনো হতে পারে না। প্রয়োজন হলে সব মেয়র প্রার্থী নিজ কেন্দ্রই একটি করে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নিতে হবে।’

বিএনপি প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে সবার থেকে যোগ্য দাবি করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘নির্বাচনে সব প্রার্থীর মধ্যে রফিকুল ইসলামই সেরা। কেননা একটানা তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ২৭ বছর তিনি জনপ্রতিনিত্ব করে আসছেন। এই দীর্ঘ সময়ে সব কাউন্সিলরদের মধ্যে রফিকুল ইসলামই একমাত্র জনগণকে সেরা সেবা দিয়েছেন। তিনি কখনো টেন্ডাবাজি করেনি। নিয়মিত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অফিস করেছেন। এর বাইরেও জনগণের প্রয়োজনে যখন যেখানে দরকার ছুটে গেছেন। সর্বোপরি পৌর সেবার কার্যক্রম সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম একজন দক্ষ মানুষ। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে সঠিক সময়ে যথাযথ সেবা পাবেন পৌরবাসী।’

জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী চরমভাবে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে। মাত্র পাঁচটি নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস করার নিয়ম থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান ১’শটির বেশি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। রঙিন ব্যানার-পোস্টার সাটাই করেছে, রাস্তায় প্রদর্শন করা হচ্ছে বড় আকারের কাঠের নৌকা। সব কিছু নির্বাচনী আচরণ বিধির বাইরে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এসব দেখেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপি এবং প্রভার বিস্তার কোনোভাবে সহ্য করা হবে না। যদি তা করা হয় তাহলে বিএনপি নেতাকর্মীরা সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে তা প্রতিরোধ করবে। প্রয়োজনে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এতে কক্সবাজারের শান্ত পরিবেশ নষ্ট হলে তার দায় আওয়ামী লীগকে নিতে হবে।’

বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জীবনের দীর্ঘ ২৭টি বছর জনগণের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছি। এই সময়ে রাত-দিন বাছবিচার না করে জনগণের দুঃখ-দুর্দশায় ছুটে গেছি। এর প্রতিদানও পেয়েছি। জনগণ আমার এই সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে বার বার ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। মেয়র নির্বাচিত হলে পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পৌরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবো ইন্শাল্লাহ।’ এসময় রফিকুল ইসলাম তার নির্বাচনী অঙ্গীকারনামা পাঠ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন পৌর নির্বাচনে সব অপ্রীতির পরিস্থিতি এড়িয়ে সুন্দর, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছেন বিএনপি নেতারা।

জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদ ইউসুফ বদরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নূরুল বশর চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না, সদস্য সচিব ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এম মোকতার আহমদ, জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল, সাংগঠনিক সম্পাদক আমীর আলী, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাসেদুল হক রাসেল, সিনিয়র সহ-সভাপতি সরওয়ার রোমন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীনুল ইসলাম শাহীন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার অর্ধশত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

রফিকুল ইসলামের অঙ্গীকার

‘থাকবে না সন্ত্রাস-দুর্নীতি-অনাচার, পরিচ্ছন্ন-বাসযোগ্য পর্যটনের কক্সবাজার’ শীর্ষক অঙ্গীকারনামায় রফিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হলে কক্সবাজার শহরকে পরিচ্ছন্ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, মেয়র দপ্তরকে জনগণের দপ্তরে রূপান্তর, পৌর সেবার বিকেন্দ্রীকরণ, আধুনিক ও গুণগত শিক্ষার ব্যবস্থা উদ্যোগ গ্রহণ, কক্সবাজারকে ডিজিটাল শহরের রূপান্তর, পর্যটন সেবা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বাড়ানো, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণ, শহরকে যানজটমুক্ত করণ, সহনীয় কর নির্ধারণ, পৌরপরিষদকে দুর্নীতিমুক্ত করণ, শহরকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করণ এবং শহরজুড়ে সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।